বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১
The Daily Post

ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় সেতু নির্মাণের দরপত্র বাতিল 

কালিয়া (নড়াইল) প্রতিনিধি

ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় সেতু নির্মাণের দরপত্র বাতিল 

ঠিকাদার নিয়োগের নয় মাস পর ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার কালিয়া-গোপালগঞ্জ সড়কের চিত্রা নদীর উপর প্রস্তাবিত কলাবাড়িয়া সেতুর নির্মাণ কাজের দরপত্র বাতিল করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। 

একই সাথে বাতিল হয়েছে ঠিকাদারকে দেয়া কার্যাদেশ। গত ৩১ মে দরপত্র বাতিলের ঘটনাটি অতি সম্প্রতি জানাজানি হলে স্থানীয়দের মধ্যে সেতুটি নির্মাণের বিষয়ে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।  

উপজেলা প্রকৌশলীর অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিগত ১৯৮৫ সালে কালিয়া তথা নড়াইলের সাথে পার্শ্ববর্তী গোপালগঞ্জ জেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য কালিয়া-গোপালগঞ্জ সড়কের কলাবাড়িয়া নামক স্থানে চিত্রা নদীর উপর সেতুটি নির্মাণ করে স্থানীয় প্রকৌশল বিভাগ। দীর্ঘদিনেও সেতুটি মেরামত করা হয়নি। 

গত ২০২০ সালের ১৫ আগস্ট সেতুর মাঝখানের একটি অংশ ভেঙে পড়ার পর তার পাশে নতুন করে একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ। সে অনুযায়ী গতবছর ১৯ জুলাই ৫ কোটি ৪৭ লাখ ৫৫ হাজার ৬০৬ টাকা ব্যয় বরাদ্দ ধরে ঠিকাদার নিয়োগের জন্য দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে ওই বছর ২৩ আগস্ট নড়াইলের ‘আলমগীর এসইজেভি’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়।

কিন্তু নতুন সেতুটি নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থানে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে ঠিকাদার নিদৃষ্ট সময়ে কাজ শুরু করতে না পেরে কাজের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত দিয়ে অনাগ্রহ প্রকাশ করায় গত ৩১মে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ দরপত্র ও কার্যাদেশ বাতিল করেছে। ইতোমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং প্রকিয়াটি শেষ হলে নতুন দরপত্র আহ্বান করাসহ ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে। 

বর্তমানে পুরাতন সেতুর মাঝখানের একটি অংশ ভেঙে পড়েছে আগেই। উঠে যাচ্ছে উপরের আস্তরণ, পিলারগুলোর মাথায় পায়ার ক্যাপে দেখা দিয়েছে ফাঁটল, খসে পড়তে শুরু করেছে দুই পাশের রেলিং। তাই দুর্ঘটনাসহ প্রাণহানি এড়াতে উপজেলা প্রশাসন সেতুর দুইপারে গাছের গুড়ি পুতে ভারি ও মাঝারি যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করেছেন।  
                               
উপজেলার কলাবাড়িয়া বাজার বনিক সমিতির সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম লুলুসহ স্থানীয়রা বলেছেন, সেতুর মাঝ খানের একটি অংশ ভেঙে পড়লে তখন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের লোকজন একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। নতুন সেতু নির্মাণের জন্য ৯ মাস আগে ঠিকাদার নিয়োগ করা হলেও শুনেছি সেই দরপত্র বাতিল হয়েছে। 

তিনি হতাশা ব্যক্ত করে বলেছেন, ঠিকাদার নিয়োগের ৯ মাসে যে কাজটি শুরু হলো না তা কতদিনে শেষ হবে তাই তাদের অপেক্ষা। দ্রুততার সাথে নতুন সেতুটি নির্মাণ না হলে যেকোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনাসহ প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে বলে তিনি আশংকা প্রকাশ করেছেন।

কলাবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাড. মাহামুদুল হাসান কায়েস বলেছেন, কালিয়ার মানুষের গোপালগঞ্জ তথা রাজধানী ঢাকার সাথে সরসরি যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই সেতুটি নির্মাণ অতিজরুরি হয়ে পড়েছে। এই এলাকার মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য দ্রুত ভূমি অধিগ্রহণসহ সেতুটি নির্মাণের জন্য তিনি জোর দাবি জানিয়েছেন। 
            
ঠিকাদার আলমগীর স্বপন বলেছেন, তিনি কার্যাদেশ পাওয়ার পর জমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে কর্তৃপক্ষ তাকে কাজটি বুজিয়ে দিতে না পারায় তিনি কাজ শুরু করতে পারেননি। তার উপর আবার নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির কারণে তিনি এই সেতুর নির্মাণ কাজ করবেন না বলে চুক্তি বাতিলের জন্য কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন এবং দরপত্রসহ কার্যাদেশের চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। 

কালিয়ার ইউএনও রুনু সাহা বলেছেন, ভূমি অধিগ্রহণসহ সেতুর কাজটি যাতে দ্রুত সম্পন্ন করা যায় সে বিষয়ে তিনি উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের সাথে আলোচনা করেছেন। 
  
নড়াইলের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিত কুমার কুন্ডু বলেন, পুরাতন এই সেতুর পাশে একটি নতুন সেতু নির্মাণের জন্য নিয়ম অনুযায়ী একজন ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে ঠিকাদারকে কাজ বুঝিয়ে দেয়া সম্ভব হয়নি। চুক্তিটি বাতিল করা হয়েছে। প্রস্তাবিত সেতুর জন্য নির্ধারিত স্থানের ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শেষ হলে আবার দরপত্র আহ্বান করা হবে। 

টিএইচ